by Kaisar Ahmad
বিভিন্ন ধর্মের দাঈ বা স্কোলার থাকেন। তারা নিজ নিজ ধর্ম বা দর্শনের দিকে মানুষকে আহ্বান করেন। বর্তমান
যুগ হল দাজ্জালের ফিতনার কালো যুগ। দাজ্জালের আত্নপ্রকাশের পূর্বে তার অনুসারীরা তার ধর্ম প্রচার করছে।
দাজ্জালের ধর্ম দর্শনের প্রচার করে তথাকথিত মোটিভেশনাল স্পীকার-রা। তারা দাজ্জালি দর্শন তথা
দুনিয়ামুখিতা, বস্তুবাদ, সেকুলারিজম, ফেমিনিজিম, সমকামিতা, লিবারেলিজম ইত্যাদি প্রচার করে। তবে এদের
প্রধান বিচরণ হল বস্তুবাদ এবং দুনিয়া অর্জন নিয়ে। পাশাপাশি সময় ও সুযোগ বুঝে অন্য বিষয়গুলো তারা মানুষের
ব্রেনে ঢুকিয়ে দেয়।
আল্লাহ মানব জাতীকে প্রেরণ করেছেন ইবাদতের জন্য। দুনিয়ার ক্ষণিক জীবন হল শুধু পরীক্ষা কেন্দ্র। যা হাতে
গোনা কয়েক বছরে শেষ হয়ে যায়। তারপর অনন্ত জীবন কাটাতে হবে জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে। তাই আমাদের প্রধান
উদ্দেশ্য, গোল, এইম হবে জান্নাতে পৌঁছানো। মানুষের প্রধান ফোকাস হবে আখিরাত। দুনিয়া, ক্যারিয়ার বা
ম্যাটারিয়াল না। এর মানে এই নয় যে ক্যারিয়ার ডিভলপ করা বা সম্পদ উপার্জন করা যাবে না। বরং সম্পদ হতে
পারে জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম, যদি তা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সমস্যা হবে প্রধান
উদ্দেশ্য আখিরাত বাদ দিয়ে ক্যারিয়ার বা সম্পদ হয়ে গেলে। নিজের পরিচয় আব্দুল্লাহকে ভুলে গিয়ে আব্দুদ
দিনার, আব্দুড ডলার হয়ে গেলে। সম্পদ সফলতা নয়, এটা মাধ্যম হতে পারে, সফলতা হল জান্নাত।
দাজ্জালের দাঈ বা মোটিভেশনাল স্পিকাররা মানুষকে ছুটতে উৎসাহ দিতে থাকে। প্রাচুর্যের লালসার দিকে দৌড়াতে
উৎসাহিত করে। 'তোমাকে ম্যাটারিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ড, বা ক্যারিয়ার গড়তে হবে, সফল হতে হবে, এভাবে না ওভাবে,
এদিকে না ওদিকে, এই টিপসে না হলে ঐ টিপসে। মূলকথা তুমি হারবে না, পিছিয়ে থাকবে না।' এভাবে সে কবরে
যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছুটতে থাকে।
"প্রাচুর্যের লালসা এবং বেশি পাওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এমনকি তোমরা লোভাতুর হয়ে
কবর পর্যন্ত পৌছে যাও।" (সূরা তাকাছুরঃ ১-২)
একটি দেশ বা সমাজ সম্পদ ও প্রাচুর্যে যত বেশি উন্নত হয়, সম্পদ আরোহণে সে সমাজে মানুষের মধ্যে ততবেশি
প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সম্পদের প্রতি লোভ, লালসা বাড়তে থাকে। আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া এবং নিজ অবস্থার
প্রতি সন্তুষ্টি কমতে থাকে। অন্যদের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ তৈরি হয়। একজন ব্যক্তির সফলতা ও ব্যর্থতার
মাপকাঠি হয়ে উঠে তার সম্পদ ও প্রাচুর্য। সম্পদ থাকলে ইজ্জত সম্মান সব পাবে, না থাকলে সমাজে তুচ্ছ
তাচ্ছিল্য করা হবে। জন্মের পূর্ব থেকেই বাবা-মা চিন্তা করতে থাকে একে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্টার বানাবে, বড়
ব্যাংকার বানাবে। বা বুয়েটে পড়াবে। কিংবা বিসিএস ক্যাডার বানাবে। এক কথায় একজন মানুষ জন্ম হলে বাবা
মায়ের জন্য সে হল মানি মেকিং মেশিন। সে টাকা আনবে সম্পদ আনবে। জন্মের পর থেকে শিশু সম্পদের জন্য দৌড়াতে
শুরু করে। এটাই হল দাজ্জালি সমাজ।
এই রেইসে সবাই দৌড়াচ্ছে। কেউ থেমে গিয়ে চিন্তা করবে সেই সুযোগ ও সময় নেই। থামলেই পিছিয়ে পড়বে। এখন মানুষ
নৈতিকতা, মূল্যবোধ, হারাম-হালাল ভুলে গেছে। কোনো ভাবে সে থেমে গেলে, বা ব্যর্থ হলে তখন হতাশা, নিরাশা
তাকে আছন্ন করে ফেলে। এই মোক্ষম সময়ে দাজ্জালের দাঈরা তাদের ইসলাহ করতে সামনে এগিয়ে আসে। তাদের জীবনের
আসল উদ্দেশ্য মনে করিয়ে দেয়। যেন তারা সম্পদ ও প্রাচুর্যের চিন্তায় ডুবে থাকে, আর এভাবে ব্রেইন ওয়াসিং
চলতে থাকে।
এরা প্রথমে বস্তুবাদের দিকেই কেবল টানে। দাজ্জাল নিজেও একটি বস্তু। এমন গড! যাকে দেখা যাবে, ধরা যাবে,
শোনা যাবে। মহান আল্লাহ, যাকে দেখা যায় না, শোনা যায় না, ধরা যায় না, এমন সত্তাকে মানা তো বস্তুবাদীতা
নয়। বিজ্ঞান এগুলো স্বীকার করে না।
যে সমাজ যত বেশি উন্নত সে সমাজে দাজ্জালের দাঈদের সংখ্যা ততবেশি। ষাট, সত্তুরের দশকে আমেরিকা উন্নতির
উচ্চ আসনে পৌঁছে, তখন পারস্পরিক প্রতিযোগিতাও সবচে বেশি দেখা যায়। মানুষ অতি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা-মা,
পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়তে থাকে। সম্পদ কামাই, বিলাস বুহুল জীবন যাপন এবং
নেশা-নারী-মদে ডুবে থাকাই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে। মানুষের চাহিদা অসীম, কিন্তু সম্পদের পরিমাণ
তো সসীম। তাই সবাই এই রেইসে জিতে না। ব্যর্থ হয়ে সমাজের বিশাল এক শ্রেণী হতাশ হয়ে পড়ে, অনেকে আত্মহত্যার
দিকে ঝুঁকে পড়ে। তখন আমেরিকা এবং ইউরোপে দাজ্জালের এই স্কোলারদের আবির্ভাব হয়। সেখানে ব্যাপক ভাবে তাদের
গ্রহণ করা হয়। ১০-১৫ বছর আগে ভারতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। আর প্রায় ৫ বছর ধরে বাংলাদেশেও এই দাঈদের
আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশে এখন এদের স্বর্ণযুগ। হাদিসে এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
"অচিরেই এমন জাতির আবির্ভাব হবে, যারা গরু-গাভীর মত মুখ ব্যবহার করে উপার্জন করবে" -(মুসনাদে আহমদ-
১৫১৭)
মোটিভেশনাল স্পীকাররা একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে। এজেন্ডা হল 'অবিডিয়েন্ট ওয়ার্কার' বা
দাজ্জালের আনুগত অনুসারী তৈরি করা। যেহেতু সাধারন মানুষের কাছে সম্পদ হল সবচে' বড় উদ্দেশ্য, আর তাই
সম্পদের দিকে আহ্বান করা স্পীকার-দের মানুষরা সবচে বেশি গুরুত্ব দিয়ে শোনে। যদি শ্রোতারা হয় স্টুডেন্ট
তাহলে তো তারা মটিভেশনাল গুরু বা শিক্ষকদের সবচে' বেশি জ্ঞানী মনে করে নিজের মাথা তাদের নিকট সঁপে দেয়।
দাজ্জালের দাঈরা এই সুযোগের জন্যেই অপেক্ষায় থাকে। এখন তারা সহজে মানুষের মগজে ফেমিনিজম,
হোমোসেক্সুয়ালিটি, লিবারেলিজম, ডেমোনক্রেজি, সেকুলারিজম ঢুকিয়ে দিতে পারে। পারস্পরিক সম্মতিতে যিনাহ
করলে সমস্যা নেই, মেয়েদের এগিয়ে যেতে হবে, বৈবাহিক ধর্ষণ, ছেলে-ছেলে ও মেয়ে-মেয়েতে বিয়ে বা টান
স্বাভাবিক, সকল ধর্ম সমান, ধর্ম যার যার উৎসব সবার ইত্যাদি ইত্যাদি আদর্শ প্রচার করে। এগুলো ইসলামের
বিপরীত বলেই তারা তা প্রচার করবে। ইসলামের বিপরীত করাই হল দাজ্জালের অনুসারীদের মূল এজেন্ডা। ইসলামের
হালালকে তারা হারাম করবে, হারাম কে হালাল। এটাই দাজ্জালের ধর্ম।
লেখকঃ Kaisar Ahmad